এক বাদল-দিনের অবসরে কবি রবীন্দ্রনাথ দেখলেন লিখলেন এক কালো মেয়ের বিবরণ কৃষ্ণকলির গল্প নজরুল আঁকলেন এক ফুল ফোটার কাহিনী জাগালেন এক কৃষ্ণকলিকে মিলল তাদের হৃদয়, তাদের চেতনা কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে মুক্তবেণী পিঠের 'পরে লোটে কালো? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দু'টি গাই শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত্র এল তাই আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু কালো? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি পূবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ আমার পানে দেখলে কি না চেয়ে আমিই জানি আর জানে সেই মেয়ে কালো? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি এমনি করে কালো কাজল মেঘ জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোণে এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে কালো? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি আর যা বলে বলুক অন্য লোক দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে ও কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ মাথার 'পরে দেয় নি তুলে বাস লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ কালো? তা সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি