ঘরছাড়া ।। আজিমপুর কলোনি এই ঘর ছেড়ে যাবার সময় বুঝিনি যে ঘরও চলে যাবে বহুদূরে এখন সে ঘর কোথায় পাবো খুঁজে? এই দালান দুটোর মাঝখানে এক রাস্তা ছিল রাস্তা দিয়ে হাত ছড়িয়ে উড়ত কত মুগ্ধ চোখের দল তা আর কোথায় পাবো বল? তা আর কোথায় পাবো বল? সামনে পিছে বাগান ছিল প্রজাপতির আখড়া ঘিরে ফুলের গায়ে রঙিন হাওয়ার ঢেউ তা কি ফিরিয়ে দেবে কেউ? তা কি ফিরিয়ে দেবে কেউ? এই শহর কোণে আপন অনেক সম্পর্কের বসত ছিল পুকুর জলে কৃষ্ণচূড়ার ছল মৃদু বাতাস ছোঁয়া টলটলে নির্মল সেই নরম মাটির গন্ধ ভেজা হৃদয় জুড়ে আদর ছিল ঘুরত লাটিম উড়ত ঘুড়ি মেঘ ছুঁয়ে চঞ্চল তখন কাটত শুধু সুতো এখন কাটে যে বন্ধন । এই ঘর ছেড়ে যাবার সময় বুঝিনি যে ঘরও ভুলে যাবে আমায় এখন সে ঘর খুঁজে পাবো কোথায়? এই ঘর ছেড়ে যাবার সময় বুঝিনি যে ঘরও চলে যাবে বহুদূরে এখন সে ঘর কোথায় পাবো খুঁজে? লোডশেডিংএ নামত আঁধার নামত সাথে জোছনা তাতে ভিজবে বলে নামত সবাই খেলত খেলা তাই জানত না সব শেষ হয়ে যায় রেশ থেকে যায় ঠিক সে রাতের হাস্নাহেনার গন্ধ যেমন পাই। এর বাড়িতে ওর বাড়িতে যাচ্ছে সবাই গল্প বই আর নিনটেনডোর নতুন গেমটা চাই সব চেনা চেনা আজ অচিন কোন মিথ্যে আশার ইট পাথরের দেয়ালে ঢেকে যায়। ওই বারান্দাতে ঝুলত লতা বাগান বিলাস তার নিচে লাল সাইকেলটা ভাবত কখন শেষ হবে দুপুর বৃষ্টিতে ওই মাঠটা ডাকতো আয় রে ছুটে আয় কেউ আঁকত ছবি, বাজত নূপুর পাশের ওই বাসায়। এই শহর কোণে আপন অনেক সম্পর্কের বসত ছিল ঝরত ঝড়ে আম লিচু আর ঢিল ছুঁড়ে কালোজাম ভাগ পেত তার সবাই, এখন ভাগের চড়া দাম। এই ঘর ছেড়ে যাবার সময় বুঝিনি যে ঘরও ভুলে যাবে আমায় এখন সে ঘর খুঁজে পাবো কোথায়? এই ঘর ছেড়ে যাবার সময় বুঝিনি যে ঘরও চলে যাবে বহুদূরে এখন সে ঘর কোথায় পাবো খুঁজে? আমি ঘরছাড়া এক ক্লান্ত পথিক খুঁজছি কিছু এদিক ওদিক হঠাৎ শিকড় পানে স্মৃতি হাতছানিয়ে টানে যখন বাঁধ ভেঙে সব মিথ্যে আবেশ পথ ভুলে দিক দিশেহারা পিছু ফেরা দেখি স্মৃতিঘেরা সেই ঘর কোথাও নেই। এই বুকের মাঝে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে ছিল চুপটি করে আলতো ছুঁলেই বুঝবে প্রাণটা করছে যে আনচান ভাঙছে না তো দেয়াল তারা ভাঙছে আমার প্রাণ এই ঘর ছেড়ে যাবার সময় বুঝিনি যে ঘরও ভুলে যাবে আমায় এখন সে ঘর খুঁজে পাবো কোথায়? এই ঘর ছেড়ে যাবার সময় বুঝিনি যে ঘরও চলে যাবে বহুদূরে এখন সে ঘর কোথায় পাবো খুঁজে?