স্কুল পালানো সেই দুপুরগুলো মনে পড়ে কি, অনিমেষ? দু'জনেই এক আকাশের নিচে হতাম নিরুদ্দেশ অরণ্য আর মাঠ পেরিয়ে অচিন পথের বাঁক স্বপ্ন ঘোরে আসতো ফিরে ঘুম ভাঙানো ডাক নিয়ে হাতে গুলতিটাকে শূন্যে গুলি ছোড়া তুই বলতি, "এক নিশানায় চাই শালিক একজোড়া" শালিক ছিল তোর খুব প্রিয়, আমার চড়ুই ছানা আমরাও যেন মুক্ত পাখি, ছিল না কেবল ডানা আমরাও যেন মুক্ত পাখি, ছিল না কেবল ডানা সূর্যটাকে মাথায় তুলে হন্যে হয়ে ছোটা নাটাই ছেড়া ঘুড়ির নেশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠা পাশের গ্রামের কিপটে বুড়োর পেয়ারা বাগান দু'টো চুরি করে সব এক সন্ধ্যাতে নিলাম মুঠো মুঠো মোড়লের গাছে ঢিল ছুড়ে রোজ কাঁচা-পাকা আম খাওয়া পূর্ব পাড়ায় বন্ধ হলো তাই আমাদের আসা-যাওয়া বাবার বদলি চাকরীর ফলে বন্ধু তোকে ছেড়ে ছোট্টটি আমি শহরে শহরে উঠেছি কেবল বেড়ে ♪ ক'দিন আগে সেই পূর্ব পাড়ায় ২৫ বছর পর গিয়ে দেখি আজও শৈশব আমার স্মৃতিতে ভাস্বর পাড়ার লোকে ভীষণ অবাক এই আমাকে দেখে দস্যি ছেলে সাহেব হয়ে ফিরলো কোথা থেকে? সেই অনিমেষ কোথায় আছে জানতে চেয়ে শেষে জবাব পেলাম কেউ জানে না কোথায় হারিয়েছে সে কেউ বলে তুই দূরদেশ গিয়ে বেঁধেছিস সংসার ২৫ বছর আগের অনিমেষ ছোট্টটি নেই আর তাই বন্ধু, এই খোলা চিঠি পাঠালাম তোর কাছে আমার চোখে সেই অনিমেষ সেই ছোট্টটি আছে ♪ তোর আর আমার প্রিয় শৈশব যেন আঁকা এক ছবি পিছু ফিরলেই চোখের সামনে একে একে ভাসে সবই আজ নেই সেই ফেলে আসা দিন, ফেলে আসা শৈশব ইট-পাথরের শহরটাতে না পাওয়ার উৎসব চার দেয়ালের সারা ঘর জুড়ে যান্ত্রিক কোলাহল নাগরিক স্রোতে ব্যথা হয়ে কাঁদে যেন পিপাসার জল গেল বছরে জন্মেছে প্রথম উত্তরসূরী আমার বুকের পাঁজরে রক্তের দামে গড়া মমতার খামার ওর কাছে ছোট্ট drawing room-টা হয়েছে খেলার মাঠ এই পৃথিবীতে সেই আগের মতো নেই সবুজের পাঠ তোর বংশের প্রদীপও কি হায় এমনই শিখাহীন? এখানে যেভাবে শৈশবগুলো আলো খুঁজে রাত-দিন অসহায় হয়ে আঁধারের মাঝে হয়েছে আজ বিলীন, বন্ধু অসহায় হয়ে আঁধারের মাঝে হয়েছে আজ বিলীন বন্ধু কী দিয়ে শোধ দেবো বল অন্ধকারের ঋণ? বন্ধু কী দিয়ে শোধ দেবো বল অন্ধকারের ঋণ? কী দিয়ে শোধ দেবো বল অন্ধকারের ঋণ?