সা রে রে গা মা গা রে গা রে সা যখন আমি মাঘ মাসের কনকনে শীতে রাত থাকতে উঠে গলা সারতে বসতাম তখন আমার বন্ধুরা প্রায় সকলেই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভোরের স্বপ্ন দেখতো যা নাকি সত্যি হয়ে ওঠে আমি তান সরগমের ওঠা পড়ায় বুঁদ হয়ে থাকতাম তখন স্বপ্ন টপ্ন দেখা হতো না কেবল দুপুরে টিফিনের সময় স্কুলের পাশেই বয়ে যাওয়া একলা নদীটির কাছে গিয়ে দাড়াতাম আর বলতাম একদিন তোর মতো আমিও যাবো নানা দেশ মানুষ আর নানা অচেনার জগতে দেখিস একদিন ঠিক যাবো পূজোর সময় বন্ধুরা দল বেঁধে ফুচকা খেত ডাকলেও আমি সে দলে ভিরিনি, গলার যত্ন উঁচু ক্লাসে অনেকের বই খাতার ভাজে যখন সিনেমা ছবি তখন আমার ব্যাকরণ খাতার পিছন মলাটে দরবারির নতুন তান লেখা আমার গান আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল অন্য পথে অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল অন্য আকাশ, অন্য আলো, অন্য রং কনে দেখা এক অপূর্ব আলোর বিকেলে আমার বিয়ে হয়ে গেল সানাই, রঙীন বেনারসি, রজনীগন্ধা ফুলশয্যার রাতে বিসমিল্লা সাহেবের সানাই বাজছিল জয়জয়ন্তী রাগে ভারি ইচ্ছে করছিল পাশে শুয়ে থাকা অজানা মানুষটার সঙ্গে বন্ধুত্ব করি জিজ্ঞাসা করি, জানো এটা কি রাগ? লজ্জায় জিজ্ঞাসা করা হয়নি অনেকদিন পর যখন গান আমার হাত ছেড়ে দিয়ে একা ফেলে চলে গেছে দূরে তখন মানুষটি বলেছিল একদিন তুমি খুব ভালো গান গাইতে পারতে, গাও না কেন? আমি উত্তর দিইনি বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা নিষ্পাপ এক শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অপলক আমাদের মেয়েকে গান শেখাবো বড় হলে, কেমন? আমি চিৎকার করে উঠলাম, না! চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে কাঁদতে লাগলো ছোট্ট মেয়ে চিৎকারে অবাক হয়ে থমকে রইল আমার স্বামীর চোখ আমি খুব নিচু স্বরে বললাম, না ও সেলাই শিখবে, রান্না শিখবে, ঘর মোছা বাসন মাজা শিখবে মার্কেটিং করতে শিখবে, জানলায় পর্দা লাগাতে শিখবে অসুখে সেবা করতে শিখবে না, গান শিখবে না গান তো টেপরেকর্ডারেই পাওয়া যাবে