এই তো আবার এসেছে আষাঢ় শ্রাবণ ও আসবে কোচিং এ পড়তে যাওয়ার মুখে এসে গেলো বৃষ্টি আসুক আজ যেতেই হবে ভিজে গেছিস যে তুই ও তো ভিজেছিস আর কেউ আসেনি স্যার কোথায় মেয়েটা বললো ছেলেটা কোনো উত্তর দিলো না গম্ভীর মুখে চক তুলে নিয়ে টেবিলের উপর লিখলো দুইশো তিরানব্বই এর বায়ান্ন মেয়েটা আড় চোখে ওই সংখ্যা দেখে নিলো স্যার এলেন আসতে শুরু করলো ক্লাস ইলেভেনের ব্যাচ ব্লাকবোর্ড ভরে গেলো ইন্টিগ্রাল ক্যাকুলেসের সমস্যায় মঙ্গলবারের পর আবার বৃহস্পতি মেয়েটা এসেছে একটু আগেই তার হাতে ডট পেন দিয়ে লিখা দুইশো নিরানব্বই এর আটষট্টি দেখালো ছেলেটাকে অংকের ক্লাস আবার পরের মঙ্গলবার ওদের আলাদা কথা হয়না তেমন কিছু পড়ার কথা আকাশের কথা সকালে যে বৃষ্টি বাববাহ কোচিং ক্লাস এর শেষে সবাই মিলে হৈহৈ করে বাড়ি ফেরা দুজনের সংখ্যা বিনিময় কখনো হাতের পাতায় কিংবা চক দিয়ে টেবিলে কখনো অংকের খাতায় দুজন দুজনকে সংখ্যা দেখানোর গোপন খেলা ছেলেটা পড়ার ফাঁকে তাকিয়ে থাকতো চোখ নামিয়ে নিতো গার্লস কলেজের মেয়েটা তারপর নিজেই একদিন সিড়ি ওঠার মুখ বলেছিল এই তোদের বাড়িতে গীতবিতান আছে অখণ্ড আছে জানিস দুইশো চুরাশি পৃষ্ঠার পয়ত্রিশ নম্বর গানটা আমি খুব ভালোবাসি বলতে বলতে এসে পড়েছিল অভিনন্দন শম্পা তমালী অনিরুদ্ধরা আর কোনো কথা হয়নি সেদিন কি লিখা আছে গীতবিতানের দুইশো চুরাশি পৃষ্ঠায় পয়ত্রিশ নম্বর গানে ছেলেটা বাড়ি ফিরে টেবিলে বই খাতা ছুরে দিয়েই খুঁজেছিল গীতবিতান ওইতো দিদি হারমনিয়ামের উপরেই রাখা আছে গানটা হচ্ছে ওগো কাঙ্গাল আমারই কাঙ্গাল করেছো আরও কি তোমার চাই আচ্ছা শেষ লাইন হায় আরো যদি চাও মোরে কিছু দাও ফিরে আমি দিবো তাই ফিরে দেবে কি দিয়েছে ছেলেটা যে মেয়েটা তাকে ফিরিয়ে দেবে সারারাত পড়াশুনার ভান করে সে উল্টে গিয়েছিল গীতবিতানের পাতার পর পাতা প্রায় আড়াই হাজার গান অল্প কয়েকটায় গাওয়া হয় যে গান চোখে পড়ে সেটাই মনে হয় চালিয়ে দেওয়া যাবে মেয়েটার গানের জবাবে তারপর মন ঠিক করে ফেললো দুইশো তিরানব্বই পৃষ্ঠা বায়ান্ন নম্বর গান দুইশো তিরানব্বই এর বায়ান্ন এতেই বুঝতে পারবে ব্রিলিয়ান্ট মেয়েটা আজি গোধূলি লগনে এই বাদল ও গগনে তার চরণ ও ধনী আমি হৃদয়ে গনি সে আসিবে আমার মন বলে সারা বেলা তারপর তো উত্তর দিলো মেয়েটা দুইশো নিরানব্বই এর আটষট্টি দেখা যাক কোন গান আমার নিশিত রাতের বাদল ও ধারা এসো হে গোপনে চলতে লাগলো আবার গানের বই নিয়ে ওদের এই সংখ্যার খেলা আসলে চিঠি যা আপনি আগেই লিখে রেখেছেন সুর দিয়ে রেখেছেন ছেলেটা ফিরে যাও কেনো ফিরে ফিরে যাও বহিলাঁ বিঁধল বাসন ও চিরদিন আছো দূরে অজানার মতো নেভিত আছে নগরে কাছে আসো তবুও আসো না মেয়েটার উওর হে সখা বারতা পেয়েছি মনে মনে তব নিঃশ্বাস ও পর সনে এসেছো অদেখা বন্ধু দখিণ ও সমিরনে এ রকম প্রতিদিন যত দিন না ওদের হাতেই ভেঙ্গে যায় আপনার দেওয়া সর্গ খেলনা এসে পড়ে উচ্চমাধ্যমিক জয়েন্ট ইন্টানেন্স মেয়েটা ডাক্তারি পড়তে বড় শহরে চলে যাওয়া সংসার বাঁচানোর জন্য বাপ মরা ছেলেটার দিনে চাকরি আর ক্লান্ত সন্ধ্যায় নাম মাত্র কলেজ শেষ গানে মেয়েটা বলেছিন অনেক কথা যাও বলে কোনো কথা না বলে তোমার ভাষা বোঝার আশায় দিয়েছি জলাঞ্জলি উত্তরে ভেবেছিল ছেলেটা আমার একটি কথা বাঁশিই জানে বাঁশিই জানে জানানো হয়নি আর এখনো এই পৃথিবীতে থাকে ওরা দেখা হয়না ওদের মাঝে বয়ে চলে আফটার কবিতার ছোট নদী আঁকেবাঁকে বয়ে চলে ওদের মতো অজস্র ছেলেটার মেয়েটার আপনিই যে বন্ধন গানের বন্ধন বলেছিলেন আপনার গান থাকবে প্রশ্ন আসে মনে ওত আগে থেকে কি করে বুঝতে পরেছিলেন আপনি আপনার গান থেকে যাবে আমাদের প্রয়োজনে থেকে যাবে আমাদের প্রেমে আমাদের দুঃখে আমাদের আনন্দ আর বিচ্ছদে ছেলেটার মেয়েটার দেখা হয়না অনেক দিন তাদের যোগাযোগের সেতু ছিলেন আপনি আপনার গানের ভিতর দিয়ে তারা যখন ছুয়ে দেখতে পারতো নিজেদের তখন দুলে উঠতো গানের সেই সেতু শান্তিনিকেতনের রাস্তায় রাস্তার তাদের এখন হয়তো দেখা যায় ছেলেটা হয়তো বৈতালিকের তালে পা মিলিয়েছে একা কিংবা সঙ্গীতের সঙ্গে কোনো বসন্ত উৎসবের সকালে মেয়েটা কখনও শাল পাতার ঠ্যাঙা হাতে পোষ বেলার ধুলোয় খোঁপায় তার গুজছে ফুল এমন কি কখনো হতে পারে না ঠাকুর আবার কোনোদিন মুখোমুখি হয়ে গেলো সেই ছেলেটা বা মেয়েটা তুলে উঠলো গানের সেই সেতু দুটি চোখের তাঁরাই তাঁরাই ঘটে গেলো এক্সিডেন্ট শিলক পাহাড়ের বদলে এই শান্তিনিকেতনে চোখে তাদের অন্তবিহীন পথ পেরিয়ে আসবার আনন্দ বন্দরের কাল শেষ সংখ্যা বিনিময়ের খেলা ভেঙ্গে গেছে কিন্তু গলার সুর আছে তাদের হৃদয়ে আছেন আপনি ওই যে ওই যে দুজনে আবার গেয়ে উঠছে এক সঙ্গে আমার সকল কাটা ধন্য করে ফুটবে গো ফুল ফুটবে আমার সকল ব্যথা রঙিন হয়ে গোলাপ হয়ে উঠবে আপনার কি মনে পরে কিশোর রবির কাছে একদিন কি চেয়েছিল আন্না তরকার সেই চুম্বন থেমে আছে আজও এই মুহূর্তে